মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছাড়ার জন্য বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপ ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে। তাকে অভিশংসনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদে সোমবার (১১ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব উত্থাপন করতে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্পের সমর্থনে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধেও জোরেসোরে ধরপাকড় চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার (৯ জানুয়ারি) নতুন করে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে এফবিআই।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার (৬ জানুয়ারি) কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা যখন নভেম্বরের নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক তখন পার্লামেন্ট ভবন ইউএস ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় প্রাণ হারান ৫ জন।
২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বুধবার ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর তার আগেই ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তোরজোড় চলছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি টেড লিউ টুইটার পোস্টে জানিয়েছেন, প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটিক সদস্যরা সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিশংসনের আর্টিকেল উত্থাপন করবেন। অভিযোগের খসড়া তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন টেড নিজেই। তিনি জানান, শনিবার বিকাল নাগাদ আর্টিকেলের জন্য ১৮০ জন কো স্পন্সর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত কোনও রিপাবলিকান ওই আর্টিকেলে স্বাক্ষর করেননি। তবে শুক্রবার রাতে আলাস্কার সিনেটর লিসা মুরকৌস্কি ট্রাম্পকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই তিনি পদত্যাগ করুন। তাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না। যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছেন তিনি।’
অভিশংসন প্রস্তাবের একটি কপি শুক্রবার টুইটারে পোস্ট করেছেন টেড লিউ। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার মাধ্যমে যে যে উচ্চ পর্যায়ের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাতে যুক্ত ছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় থাকতে না দিলে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সংবিধানের জন্য হুমকি তৈরি করবেন। ট্রাম্প নিজের সরকারব্যবস্থা্ ও আইনের শাসনের সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রচেষ্টার সময় সক্রিয় কর্মী ছিলেন লিউ।
শনিবার স্যান ফ্রান্সিসকোতে এক অনলাইন কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্যে হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘জটিলতা, শুধু জটিলতাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্ররোচনাকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে এবং তা মোকাবিলা করতে হবে।’
রাজনৈতিক এমন প্রক্রিয়ার বাইরেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে হামলার পর দেশের মধ্যেই মানুষের একটা বড় অংশের ক্ষোভের কারণে হয়ে উঠেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ, তারা মনে করেনইতিহাসের এই নজিরবিহীন তাণ্ডবের ঘটনায় সারাবিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ইপসস পরিচালিত এক জরিপে আভাস মিলেছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের অপসারণ চায় দেশটির ৫৭ শতাংশ নাগরিক।
এদিকে শনিবার (৯ জানুয়ারি) এফবিআই-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় অংশগ্রহণকারী সন্দেহে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠন করা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে এ দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। এছাড়া ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার এক আইনপ্রণেতাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার দিন ক্যাপিটল হিলে তার অবৈধভাবে প্রবেশের লাইভস্ট্রিম ভিডিও প্রচার করেছিলেন তিনি।